নীরব মন
মোহা কাবিরুল ইসলাম
নিত্যান্তই মানুষের চেষ্টার সীমা থাকে না, চেষ্টায়
সাফল্যের মূল এমন চিন্তা ধারা প্রায় সবারই হয়ে থাকে আর থাকাটাই স্বাভাবিক।
লক্ষ্য স্থির করা মানুষের কর্তব্য আর কর্তব্যের অপ ব্যবহার ধ্বংসের মূল।পূর্ব দিকে
রবি উঠা যেমন চিরন্তন সত্য সেই সূর্যের কিরণের ছটায় নতুন ছবি দেখাও সৌভাগ্য জনক।
সেই ছটায় কেউ প্রভাতে আকাশে দেখে রক্তিম বর্ণের আলোক ছটা কেউ বা দেখে সবুজ পাতার
উপর চক্চকে আলো কেউ বা দেখে ধান,গম,জবের ক্ষেতে পাকা ফসলের উপর সোনালী রঙ আবার কেউ
দেখে নারীর সকালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে চুল শুকানোর রোমান্টিক পর্ব, তবে সকলের লক্ষ্য
আলাদা ও প্রত্যেকের কাছেই প্রতি মুহূর্ত যেন আনন্দের তা থেকে তাঁরা কতটা সাফল্য
লাভ করেছেন তাঁরাই ভালো জানেন তবে আমি যেন প্রতিটি দৃশ্যতেই আনন্দ উপভোগ করি ,যেন
ভোরের রক্তিম বর্ণের আলোক ছটাটাও একজন প্রেম অনুরাগীর প্রতিভু, সবুজ পাতার উপর
চক্চকে আলোয় সখা-সখীর হৃদয় বীদির্ণ হয়ে ওঠে,যেন তখনই গুনে সুখের পরশ,আর ঊষার
কিরণে কালো চুল যেন প্রতিটি প্রেমিক প্রেমিকার প্রতিভু। আর প্রত্যেক ষোলোকলা পূর্ণ
যুবক যুবতী-ই যেন এই খেলায় মেতে ওঠে আর মাতবেনায় বা কেন প্রত্যেক লেখক-লেখিকা,
সাহিত্যিক, ও ঔপন্যাসিক এমনকি বয়ষ্ক কাকা কাকিমা ও দাদু দিদিমার মুখেও
বয়ঃসন্ধিকালের কথা শুনতে পাওয়া যায়,তবে তাঁরা প্রত্যেকেই এই মোহ থেকে বাঁচতে
বল্লেও এই বেড়া জালেয় আটকে পড়ে ও মায়াবী জীবনের আচ্ছাদনে আচ্ছাদিত হয়ে একি
ছায়া তলের আশ্রয়ে আশ্রিত হবার ঐকান্তিকতা মনের মধ্যে উজ্জীবিত করলেও অনেক সময়
সেই গন্ডির বাইরে বের হতে পারেনা কিন্তু তারা দুজনেই একে অপরের সম্পর্কে সম্পর্কিত
হয়ে আলাদা আলাদা ভাবেই একজন আর একজনের জন্য জীবনকে আলাদা
ভাবেই কাটিয়ে দিতে উদ্যত হয় তথাপি তাদের মধ্যে কোনো একজনের সামনে এমন
মুহূর্ত উপস্থিত হয় যে, সে বাবা-মা দের মুখের দিক চেয়ে অন্য কোনো কথাই বলতে
পারেনা সে নিজের পিতা-মাতার সম্মানার্থে নিজেকে আত্মনিয়োগ করে।এমন ঘটনা স্বভাবতই
ঘটে থাকে। আবার দুই জনেই সমাজের মান রক্ষার প্রতিভু তাই তারা আবার সমাজের ও
প্রকৃতির মাঝেও যেন কথা বলতে ইতস্ততঃ বোধ করে আর এমনবস্থা গুলোই তাদের জীবনের
অন্তর্বেদনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। না সেসব দুঃখ বেদনা অপরের কাছে প্রকাশ করতে
সক্ষম হন,আর সক্ষম হবে কি করে যারা তার কাছ থেকে শুনে তারাই একদিন তার
প্রতি বিদ্রুপ ঠাট্টা করতে শুরু করে। হয়তো বা কেউ সচকিত সময়ে অন্য
মনস্ক হয়ে মধুমায়া নামটি বলে দিল পাশে থাকা প্রিয় বন্ধুই তাকে মধুমায়া নামে
ডাকতে শুরু করল আর সেই মধুমায়া নামটি যেন অন্য নামের সংকেত হয়ে থেকে গেছে
নৌমানের মনে, আর যখনি শহাজাদ নৌমানকে দেখে তখনি সে মৌমাছির মধুমায়া
হাসির ছলে ধ্বনিত করে আনন্দের হাসি হেসে প্রকৃতির মুক্ত বাতাস গ্রহণ করে কিন্তু সে
বন্ধুর প্রতি কোনো রূপ লক্ষ্য না করে এমনই বলতে থাকে বন্ধু নৌমান ও সেই দুঃখের
সময় টাকে হাসিখুশি ভাবেই কাটাতে উদ্যমী হয়, কিন্তু বারতক্রমে মধুমায়া সংকেত
নামক মানুষ আহসানা ও বাড়ির চাপে উচ্চ শিক্ষার জন্য নিজেকে সেই নার্সিং বিভাগে
নিযুক্ত করে, তারপর তার কাছ থেকে অন্তঃসত্ত্বার মানুষটির নম্বর থাকা সিমটিও
হারিয়ে যায়, তখন থেকে তার যেন আর কথা হয়না। অপরদিকে নৌমান একজন উচ্চ শিক্ষিত
সহজ সরল আবেগি প্রাণের মানুষ,সে তার বন্ধুর মুখে বারংবার মধুমায়া শুনতে শুনতে
গোপনে আহাসানার বাবার কাছে এক অন্য বন্ধুর দ্বারা বিয়ের প্রস্তাব পাঠালেন,
আহসানার বাবা ধনী মানুষ তাই নৌমানের বিয়ের প্রস্তাব রাজি না হয়ে তাকে তুচ্ছ মনে
করে সেই কথা ফেরত পাঠালো তখন নৌমানের হৃদয় ভীষণ যন্ত্রণা পেল । কিন্তু তাদের দুই
জনের যে ভালোবাসা, প্রেম প্রীতি তারা উভয় একে অপরের কাছে প্রকাশ করতে পারেনি কিন্তু
নৌমান যেন নিজেকে তুচ্ছ মনে না করে সে কর্মের প্রতি যত্নশীল হতে বাধ্য হল। অপরদিকে
আহসানা নতুন বন্ধু বান্ধবী পেয়েও যেন নিজিকে সেই স্মৃতি থেকে সরাতে পারছে না যেই
স্মৃতি গুলো পূর্বে দেখেছে সেগুলিই যেন কবি লেখকদের মতো কখনো প্রভাতের রোদ পাতার
উপর পড়ে সোনালী দেখায়, আবার কখনো সেই কবিদের কল্পনায় সকালের রোদে কালো চুলের
সৌন্দর্যতা, মেয়ে হয়েও এইরূপ ভাবনা ভেবে সে নিজের কল্পনা করা সুখের দিন খোঁজে
কিন্তু সেই সুখের দিন কোথায়? আহসানা সেই ভাবনা ভাবতে ভাবতেই ব্যকুল হয়ে নিজেকে
দুঃখী বলে কবি সুকান্তের মতো গালে হাত দিয়ে ভাবতে থাকে ও বলে
"হে বিধাতা তৈরীতে নায় আপনার ভুল,
ডুবেছি আমি প্রেম দরিয়ায় বিলকুল ,
কেমনে লাগলো এ ছোঁয়া
জানিনা জানিনা জাআনিনা..."
আহসানার এই কথা যেন তার এক বান্ধবী শুনে নেয় ও তাকে
প্রশ্ন করলে আহসানা নিশ্চুপ হয়ে থাকে ও কোনো উত্তর না দিয়ে সে প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে
তার হেড ডিপার্টমেন্টের কথা বলতে শুরু করে সেই মুহূর্তে আর এক বান্ধবী এসে বলে চলো
ক্লাস শুরু হবে ক্লাস সেরে এসে গল্প শুরু করবো বলে তারা সকলেই ক্লাসে প্রস্থান
করলো। কিন্তু আহসানার বাবা নৌমানকে তুচ্ছ মনে করলে ও নৌমান নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে
করে কাজে যত্নশীল হয়েছে বলে তার কজ ও ব্যবসা দ্রুত বিস্তার লাভ করতে শুরু করেছে ও
নিজ শিক্ষার প্রতি ঝোঁককে আর ও উঁচু মানের করতে চলেছে আর সু শিক্ষায় তার জীবনের
মূল সম্পদ। নৌমন যথেষ্ট বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তি। সে নিজের মন থেকে কখনোই আহসানাকে
সরাতে পারেনি, তার মনের এই বেদনা যেন অন্তরকে কুরে খেয়েছে,হাঠাৎ সে জ্বরে কাতর
হয়ে পড়ে পাঁচ দিন গত হলেও জ্বর ছাড়েনা এই অবস্থা দেখে পাড়া প্রতিবেশী তাকে
নার্সিং হোম এ নিয়ে যায় বারতক্রমে আহসানা যেই নার্সিং হোমে পড়া শোনা করে সেই
নার্সিং হোমে নিয়ে যায়, এদিকে আহসানা শেষ বর্ষের ছাত্রী তার নার্সিং হোম
প্রাকটিসের পর্যায় চলছে।নৌমানকে যেই কামরায় রাখা হয় সেই কামরায় আহসানা রুগীদের
সেবা শুশ্রূষা করে চলেছেন হাঠাৎ নৌমানকে দেখে সে আর নিজেকে সামলাতে না পেরে মাথা
চক্কর খেয়ে পড়ে যায় তখন তাকে তার বান্ধবীরা তুলে মাথায় জল দিয়ে পূর্বের
অবস্থায় ফিরিয়ে আনে তখন ও যেন আহসানার চোখ থেকে জল টপ টপ করে বৃষ্টির মতো ঝরে
পড়ছে বান্ধবীরা তার কাছ থেকে কষ্টের কথা জানতে চাইলে ও সে গোপন রাখার চেষ্টা করে,
কিন্তু যেই বান্ধবী তার মুখ থেকে শুনেছিল -
"হে বিধাতা তৈরীতে নায় আপনার ভুল,
ডুবেছি আমি প্রেম দরিয়ায় বিলকুল ,
কেমনে লাগলো এ ছোঁয়া
জানিনা জানিনা জাআনিনা..."
--তার হঠাৎ করে মনে পড়ে যায় এই কথা তখন আর তার
বুঝতে বাকি থাকলো না তার প্রেমের কথা এদিকে আহসানা চোখের জল মুছে নাকের উপর থেকে
রুমাল বেঁধে চোখে জল ভরা মনে ব্যথা নিয়ে নৌমানের কপালে জলভরা কাপড় নিয়ে বসায়
আর জিজ্ঞেস করেন - 'আপনি এখান কেমন অনুভব করছেন ?' এই জিজ্ঞাসার আওয়াজ
শুনে আহসানার গলার স্বুর শুনতে পায় ও চোখ খুলে দেখে তখন তার চোখ থেকে ও জল টপ টপ
করে বৃষ্টির মতো ঝরে পড়তে লাগলো এ দিকে আহসানার বান্ধবী তার অপর বান্ধবীদের নিয়ে
তার প্রেমের ব্যাপারে আলোচনা করে ও তার পিতা মাতাকে ব্যাপারটা জানিয়ে দেয় ।তার
পিতা মাতারাও তৎক্ষণাৎ এসে দেখে সে নৌমানের কাছে দাঁড়িয়ে আছে নৌমান নিজের হৃদয়
শক্ত করে আহসানার প্রশ্নের জবাবে বলেন 'আমি ভালো আছি, আপনি? আহসানা বাবা মা কে
দেখে প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারল না বরং মা বাবাকে দেখে বলে- 'এই সময়ে
আপনারা?' হ্যাঁ তোকে নিতে আসলাম চলো। আহসানাকে নিয়ে গেল তাদের ক্যাম্পাসের মেইন
ডিপার্টমেন্টের হেড প্রফেসরের কাছে ও তার অসুস্থতার কথা বলে ছুটি চাইলে প্রফেসর
আহসানার প্রেসার মাপলে প্রেসার লো দেখায় তখন প্রফেসর মহাশয় কয়েক রকম ট্যাবলেট
লিখে দিয়ে ও এক সপ্তাহের ছুটি দেয় ।বাড়ি গিয়ে তার তড়িঘড়ি বিয়ের ব্যবস্থা
করে নৌমানের সপ্তম শ্রেণীর সহপাঠী আরমানের সাথে যদিও আহসানা বিয়ে করতে রাজি নন,বল
পূর্বক আহসানার বিয়ে দেয়। এদিকে নৌমান তিনদিনে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরে
,বাড়ি ফেরার পরও তার আহসানার কথা মনে পড়ে মনে পড়লেও কিছু করার নেই তাকে তার
ব্যাবসা সামলাতে হয়,আর অসুস্থ হওয়ায় তার কাজের চাপ বেড়ে যায়। আহসানার বিয়ে
হয়ে যায় তারপর তিনদিন পর শ্বশুর বাড়ি থেকে ফিরে এসে আবার নার্সিং হোম যেতে হয়
।তার বান্ধবীরা তাকে কটাক্ষ করলেও সেই যন্ত্রণা তাকে সহ্য করতে হয় নীরবে তিনি যেন
পৃথিবীতে একাই এমন হৃদয়ের নারী, এক বছর পর আরমান ছেলে হওয়ার খুশিতে নৌমানকে
নিমন্ত্রণ করে ও আরো অনেক বন্ধু বান্ধবীকে নিমন্ত্রণ করে ।নৌমান জানেন না আহসানার
আরমানের সাথে বিয়ে হয়েছে নৌমান বন্ধু আরমানের বাড়ি গিয়ে একাকি ঘরে বসে তার ঠিক
কিছুক্ষণ পর আহসানা ঘরে প্রবেশ করতে গিয়েই দেখে নৌমানকে,দুই জনেই একে অপরকে দেখে
চোখে চোখ রেখে দেখে কিন্তু দু'জনেই যেন হতবাক এমন সময়ে আহসানার শাশুড়ি আসে তখন
আহসানা জল ভরা চোখ নিয়ে পাশের ঘরে রওনা দেয়।
0 Comments