Advertisement

Responsive Advertisement

বোকা ব্রাহ্মণের স্বপ্ন

 


বোকা ব্রাহ্মণের স্বপ্ন

 

অনেক বছর আগের কথা। এক গ্রামে বাস করত এক ব্রাহ্মণ। সে ছিল ভীষণ গরীব। দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে কোনোরকমে দিন কাটত। প্রায়ই তাকে উপোস করে থাকতে হত। একদিন ভাগ্যবশত এক গামলা আটা পেয়ে গেল। খুব আনন্দ হল। সে বাড়িতে গিয়ে শিকেতে আটা ঝুলিয়ে রাখল। বিছানার কাছেই ছিল আটা ভরতি গামলাটা। খুশি মনে চেয়ে থাকল আটার পাত্রটার দিকে। নানা চিন্তা করতে লাগল সে। সে ভাবল, আমাকে বাড়ি বাড়ি ভিক্ষে করে বেড়াতে হবে না। আমাকে বড়ো হতেই হবে। চিন্তা করতে করতে ব্রাহ্মণ ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখল অনেক আটা আছে এই গামলার মধ্যে। সব আটা আমি নিজের জন্য খরচ করব না। আমি হাটে গিয়ে বেচব। এখন দেশে দুর্ভিক্ষ হলে ভালো হয়। তা হলে আমি আটা বিক্রি করে মোটা দাম পাব।

 

অনেক ক্রেতা আমার কাছে আটা কিনতে আসবে। আমি বেশ কিছু টাকা দিয়ে আটা বিক্রি করব। তারপর লাভজনক ব্যবসা শুরু করব। সেই ব্যবসার টাকায় দুটো ছাগল কিনব। ছাগল দুটোকে ঘাসপাতা খাওয়াব। কিছু দিনের মধ্যে তাদের দুটো বাচ্চা হবে। এক বছরের মধ্যে কমপক্ষে দশটা ছাগল হবে, আবার দশটা ছাগল বিক্রি করে অনেক টাকা পাব। এই টাকা দিয়ে বড়োসড়ো লাভজনক ব্যবসা শুরু করব। দুটো গোরু কিনব। গোরুগুলো দুধ দেবে। গোরুগুলোর দুটো বাচ্চা হবে। বাচ্চাগুলো বড়ো হয়ে দুধ দেবে। তাদেরও বাচ্চা হবে। আরও বড়ো হয়ে তারাও দুধ দেবে। সে দুধ বাজারে বিক্রি করব। দুধের ছানা থেকে বরফি, রসগোল্লা, গোলাপজাম, নানা ধরনের মিষ্টি তৈরি করব, বড়ো দোকানে সে সব মিষ্টি সাজিয়ে রাখব। হাঁক দিয়ে খদ্দের জড়ো করব। ভালো ভালো মিষ্টি, খাঁটি টাটকা মিষ্টি একবার খেলে আবার আসতে হবে। খেলে জিভে জল আসবে।

আমার হাঁকডাক শুনে গ্রামের ছেলেমেয়েরা দোকানে আসবে মিষ্টি খেতে। গ্রামসুদ্ধ সবাই আমার মিষ্টি কেনার জন্য ভিড় করবে। দুদিনেই ফুলে ফেঁপে উঠবে আমার ব্যবসা। আমার অনেক টাকা হয়ে যাবে। আমি বিরাট বড়োলোক হব।

 

এত টাকা নিয়ে আমি কী করব? একটা হাতি কিনব। হাতির পিঠে চড়ে বসব রাজার মতো। এবার আমি হীরে মণিমুক্তোর ব্যবসা করব। দামী দামী পাথর কিনব। ঝকঝকে কোট পরে রাজবাড়িতে যাব। রাজার সঙ্গে দেখা করে জানতে চাইব, আপনার কী হীরে মুক্তো চাই। আমার কাছে সেরা জিনিস আছে। রাজাকে দেখাব সব হীরে জহরত।রাজা অনেক টাকা দিয়ে হীরে মুক্তো জহরত কিনবেন। এই ভাবে আমার অনেক টাকা হবে। এবার আমি একটা বসত বাড়ি তৈরি করব। বিরাট প্রাসাদ বাড়ি। তার সামনে থাকবে সুন্দর ফুলের বাগান। বাগানে ভালো ভালো ফুল ফুটবে। বাড়িটা হবে শ্বেতপাথরের বড়ো বড়ো থামওয়ালা।

 

এইসব দেখে ধনী লোকেরা আমার বাড়ির সামনে ভিড় করবে। তারা আমাকে তোষামোদ করবে, তাদের মেয়েকে বিয়ে করার জন্য। আমি তাদের মেয়েদের মধ্যে একজনকেও বিয়ে করব না। এবার স্বয়ং রাজা আসবেন। তিনি তাঁর রাজকন্যার সঙ্গে আমার বিয়ে দেবার প্রস্তাব করবেন। এবার আমি রাজী হব। আমি সেই কেশবতী পরমা সুন্দরী রাজকন্যাকে বিয়ে করব। কিছু দিন বাদে একটি সন্তান আসবে আমাদের। আরও কিছু দিন পর আরও একটি সন্তান। সবশেষে একটি মেয়ে। ছেলেমেয়ে নিয়ে বাগানে বসে গল্প করব! খেলব। আমি যখন ক্লান্ত হব, তখন স্ত্রীকে বলব ছেলেমেয়েদের সঙ্গে খেলতে। তখন আমি বিশ্রাম করব। আমার স্ত্রী অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লে ছেলেমেয়েরা আমার কাছে ছুটে আসবে। আমি আমার বিশ্রামের ব্যাঘাত ঘটতে দেব না। তখন বকুনি দেব। বলব, এখন বিশ্রাম করছি। তোমরা এসো। তারা আরও দুষ্টুমি করবে। আমি খুব রেগে যাব। লাঠি তুলে পেটাতে আরম্ভ করব।

স্বপ্নের ঘোরে ব্রাহ্মণ ছেলেমেয়েদের মারতে গিয়ে যেই ওপরদিকে হাত তুলেছে, লাঠি লাগল আটার গামলায়। মাটির গামলা পড়ল তার মাথায়। ভেঙে চুরমার। সব আটা মাটিতে পড়ে গেল। ব্রাহ্মণ লাফ দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে দেখল, সব আটা ঘরে ছড়াছড়ি। চারপাশে তাকিয়ে দেখল প্রাসাদবাড়ি ছেলেমেয়ে রাজকন্যা কিছুই নেই। তখন সে মাথায় হাত দিয়ে হায় হায় করতে লাগল।

Post a Comment

0 Comments