Advertisement

Responsive Advertisement

সেয়ানে সেয়ানে

 


সেয়ানে সেয়ানে

 

সুজয় নামে কোনো এক বণিক বাস করত কোনো এক দেশে। বাণিজ্য করতে সে যেত বিভিন্ন দূর দেশে। ব্যবসা বাণিজ্য করে সুজয় অনেক টাকা আয় করেছিল। একবার দারুণ মন্দা দেখা দিল। আয় বন্ধ হয়ে গেল। সে লোকের কাছে ধার নিতে লাগলো। ধীরে ধীরে ধারের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। সুজয়ের মনের শান্তি নষ্ট হয়ে গেছে। সে ভাবল, শহরে বসে থেকে লাভ নেই। অন্য কিছু করে দেখলে হয়। সে সবকিছু বিক্রি করে দেনা শোধ করল। রইল বাড়ি আর পাঁচশো সের ওজনের লোহার কড়ি। সে বিদেশ যাবার জন্য তৈরি হল। যাবার আগে তার অন্তরঙ্গ বন্ধু রামের সঙ্গে দেখা করল।

সুজয় বিদেশে যাচ্ছে শুনে রামের খুব দুঃখ হল। রাম বলল, বন্ধু, তুমি দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছো, আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে, বলো আমি কী ভাবে তোমার উপকার করব? সুজয় বলল - খুব ভালো কথা বন্ধু, আমার কাছে একটা লোহার কড়ি আছে। ওটা আমি তোমার কাছে রাখতে চাই। যতদিন আমি না ফিরব, তুমি সাবধানে ওটা তোমার কাছে রেখে দিও, কেমন ?

 

রাম বলল নিশ্চয়ই। নিশ্চয়ই। তুমি নিশ্চিন্তে তোমার লোহার কড়ি আমার কাছে রাখতে পারো। যতদিন তুমি ফিরে না আসছ, আমি নিরাপদে রেখে দেব। সুজয় বন্ধুর কাছে লোহার কড়িটা রেখে নিশ্চিন্ত মনে বিদেশে গেল ব্যবসা করতে। বেশ কয়েক বছর ধরে সে বিদেশে ব্যবসা করল। এবার তার ভাগ্য ফিরে গেল। আগের মতো ধনী হয়ে উঠল সে। আরও কয়েক বছর পর অনেক ধনরত্ন আর টাকাকড়ি নিয়ে সুজয় দেশে ফিরে এল। দেশে এসে আবার ব্যবসা শুরু করল। দেখা করল রামের সঙ্গে। অনেক দিন বাদে দুই বন্ধুতে দেখা হয়েছে। রাম বন্ধুকে হাসি মুখে অভ্যর্থনা জানাল। বিদেশ ভ্রমণের গল্প শুনতে লাগল। যাবার সময় সুজয় বলল ভাই রাম, এখন আমি তো এদেশে থাকব। বিদেশে যাবার সময় তোমার কাছে যে লোহার কড়িটা রেখে গিয়েছিলাম, সেটা আমাকে ফেরত দাও। এই কথা শুনে রাম যেন অবাক হয়ে গেল। সুজয়ের লোহার কড়িটার দিকে তার অনেক দিনের নজর ছিল। তার ইচ্ছে নেই, কড়িটা ফেরত দেবার। সে জানে বাজারে ওটা বিক্রি করলে অনেক টাকা পাবে।

সে বলল একটা মুশকিলে পড়ে গেছি ভাই, তুমি আমার প্রাণের বন্ধু, তোমার কাছে কথাটা কী ভাবে বলব তা বুঝতে পারছি তোমার কড়িটা আমি যত্নেই রেখেছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি ইঁদুরে ওটা খেয়ে ফেলেছে। এখন কী করি বলো? ওই ধরনের কড়ি এখন আর কিনতে পাওয়া যায় না। তাহলে তোমাকে একটা কড়ি কিনে দিতাম। আশা করি তুমি আমার কথা শুনে ভুল বুঝবে না। সুজয় রামের চালাকি বুঝতে পারল। বলল যাক গিয়ে, নিয়ে ভেবে আর কী হবে? ইদুরে খেয়ে ফেলেছে, তোমার তো কোনো দোষ নেই। কিছু ভেবো না।

 

যাবার সময় সুজয় বলল ভালো কথা, বিদেশ থেকে আসার সময় তোমার জন্য একটা উপহার নিয়ে এসেছি। তোমার ছেলেকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিও। সে উপহার নিয়ে আসবে। রাম ভাবল, কড়ি চুরির ব্যাপারটা ভালোভাবেই মিটে গেছে। বোকা বন্ধু কিছু বুঝতে পারেনি। এখন দেখা যাক কী উপহার পাওয়া যায়। এই ভেবে সে তার ছেলেকে সুজয়ের সঙ্গে পাঠিয়ে দিল। সুজয় রামের ছেলেকে তার বাড়িতে এনে একটা ঘরে দরজা বন্ধ করে রেখে দিল। সন্ধ্যা হয়ে গেল, ছেলে ফিরল না। রাম খুব চিন্তিত হল। সে তখন সুজয়ের বাড়িতে গিয়ে খোঁজ করল। রামকে দেখতে পেয়ে সুজয় বলল বন্ধু, একটা সর্বনাশ হয়ে গেছে। আমি তোমায় খবর দিতে পারিনি। রাম বলল কী হয়েছে? সব খুলে বলো। যখন তোমার ছেলেকে নিয়ে বাড়িতে আসছি, তখন একটা বাজপাখি এসে তোমার ছেলেকে উঠিয়ে নিয়ে গেল। আমি কিছুই করতে পারলাম না। রাম তখন রেগেমেগে বলল মিথ্যে কথা। পনেরো বছরের একটা ছেলেকে বাজপাখি তুলে নিয়ে যাবে? চালাকির জায়গা পাওনি? সুজয়ের সঙ্গে রামের ঝগড়া হয়ে গেল। চারপাশে অনেক লোক ভিড় করল। ঝগড়ার নিষ্পত্তি হল না। তখন দুজনে হাজির হল বিচারকের দরবারে।

 

বিচারকের সামনে হাজির হয়ে রাম চিৎকার করে বলল ধর্মাবতার, এই লোকটা আমার ছেলেকে চুরি করেছে। ওকে বলুন আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে। বিচারক সুজয়কে বললেন রামের ছেলেকে ফিরিয়ে দাও। সুজয় বলল ধর্মাবতার, কী ভাবে ফেরত দেব বলুন? ওর ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম। হঠাৎ বাজপাখি ছোঁ মেরে ছেলেকে তুলে নিয়ে গেছে। আমি অসহায়ের মতো তাকিয়ে থাকলাম। কিছু করতে পারলাম না। সুজয়ের কথা শুনে বিচারক বললেন কী যা তা বলছ! বাজপাখী একটা ছেলেকে তুলে নিয়ে যাবে? তা আবার হয় নাকি? সুজয় বলল নিশ্চয়ই হতে পারে। তা না হলে রামের বাড়িতে ইঁদুর যদি আমার পাঁচশো সের ওজনের লোহার কড়ি খেয়ে ফেলতে পারে, তাহলে বাজপাখী একটা ছেলেকে ছোঁ মেরে নিয়ে যাবে, এতে আশ্চর্যের কী আছে?

সুজয়ের কথা শুনে বিচারকের মনে কৌতূহল হল। তিনি সব কথা জানতে চাইলেন। সুজয় সব ব্যাপারটা খুলে বলল। তখন বিচারক রামকে বললেন, সুজয়ের লোহার কড়ি ফেরত দিতে। আর সুজয়কে বললেন, রামের ছেলেকে ফেরত দিতে। দুজনেই বিচারকের কথা মতো কাজ করল। বুদ্ধিমত্তার জোরে সুজয় তার হারানো জিনিস ফিরে পেল।

Post a Comment

0 Comments