Advertisement

Responsive Advertisement

বানরের প্রতিশোধ

 


বানরের প্রতিশোধ

 

এক রাজার নাম ছিল চক্র। রাজপুত্ররা বানর নিয়ে খেলা করতে ভালোবাসত। বানরদের ভালো ভালো খাবার খাওয়াত। বানরদের দলপতি ছিল খুবই অভিজ্ঞ। রাজপ্রাসাদে যেসব মেষ থাকত, তার মধ্যে একটি ছিল খুবই লোভী। সে রান্নাঘরে ঢুকে সামনে যা পেত, তাই খেয়ে নিত।একদিন রাঁধুনি তাকে খুব মারল। বানর দলপতি এইসব দেখে ভাবল, একদিন আমাদেরও এই দশা হবে। সময় থাকতে থাকতে রাজপ্রাসাদ থেকে চলে যেতে হবে। সে সব বানরদের একজায়গায় ডাকল। মনের কথাটা খুলে বলল। দলপতির কথা শুনে কয়েকজন লোভী বানর বলল এমন রাজপ্রাসাদ ছেড়ে আমরা কোথাও যাব না। এখানে কেমন ভালো ভালো খাবার খেতে পাচ্ছি। জঙ্গলে গেলে শুকিয়ে মরতে হবে। দলপতি বলল মুখের দল। তোরা জানিস না এইসুখের পরিণতি?

আমি এখানে আর একদন্ডও থাকব না। এই বলে সে রাজপ্রাসাদ ত্যাগ করে বনে চলে গেল। পরের দিন ওই মেষ আবার রন্ধনশালায় ঢুকল। পাচক তাকে জ্বলন্ত কাঠ দিয়ে মারতে শুরু করল। মোষের গায়ে আগুন ধরে গেল। সে চিৎকার করে ঢুকে পড়ল ঘোড়ার আস্তাবলে। ঘোড়াদের খাওয়ার জন্য যে শুকনো ঘাস ছিল, সেখানে আগুন লেগে গেল। কয়েকটা ঘোড়া মরে গেল। কয়েকটা আহত হল।

 

রাজা এই ক্ষতি দেখে খুব রেগে গেলেন। তিনি রাজবৈদ্যকে ডেকে আনলেন। আহত ঘোড়াগুলির চিকিৎসা করতে হবে। রাজবৈদ্য হুকুম দিলেন, এখনই বানরের চর্বি চাই। রাজা সঙ্গে সঙ্গে সব বানরদের হত্যা করার আদেশ দিলেন। রাজার সৈন্যরা সব বানরকে হত্যা করল। বানরের দলপতি এই খবরটা শুনে খুবই বিমর্ষ হল। কী করে এর প্রতিশোধ নেওয়া যায় সে কথা ভাবতে লাগল। একদিন ভাবতে ভাবতে সে বনের মধ্যে দিয়ে চলেছে। অনেকক্ষণ চলার পর তার ভীষণ তেষ্টা পেল। কাছে একটা সরোবর দেখে ভাবল, সেখানে নামবে। কেমন যেন সন্দেহ হল তার মনের মধ্যে। সে ভালো করে দেখল ডাঙা থেকে জলে জানোয়ারের পায়ের দাগ আছে। সে জলে না নেমে ডাঙায় দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে পদ্মফুলের ডাঁটা ছিড়ে তা দিয়ে জল খেতে লাগল। হঠাৎ একটা বিরাট রাক্ষস উঠে দাঁড়াল। তার গলায় বহু মূল্যবান রত্নহার।

 

রাক্ষসকে দেখে বানরের দলপতি খুবই ভয় পেল। কিন্তু মুখে ভয় প্রকাশ করল না। রাক্ষস হেসে বলল কে ভাই তুমি? তোমার মতো বুদ্ধিমান জীব আমি তো কখনও দেখিনি। বানর রাক্ষসের গলার রত্নহারের দিকে তাকিয়ে বলল তোমার আহার কতটা ? রাক্ষস হেসে বলল জলের মধ্যে পেলে যত দেবে তত, আর ডাঙাতে উঠলে ভীতু সম্প্রদায়ের লোক।

বানর দলপতি বলল দু-একটা দিন অপেক্ষা করো, তোমার ভোজের ব্যবস্থা করব। তোমার গলার রত্নহারটা কিছু সময়ের জন্য আমায় ধার দিতে হবে। তোমার ভয় নেই। ঠিক সময়ে তোমাকে এটা ফেরত দেব। রাক্ষস হারটা তার হাতে তুলে দিয়ে বলল খুশি মনে আমি এটা তোমাকে দিলাম। বানরের দলপতি গলায় হারটা পরে রাজার বাগানে ঢুকে গাছে। গাছে ঘুরতে লাগল। রাজার লোকেরা তাকে দেখে হৈ হৈ করে উঠল। রাজার আদেশে বানরকে ধরে আনা হল। সকলে জিজ্ঞেস করল, তুমি রত্নহারটা কোথায় পেলে? বানর দলপতি বলল রাজামশাই, আপনার রাজ্যের এক সরোবরে ডুব দিলে রত্নহার পাওয়া যায়। রাজা জিজ্ঞেস করলেন, যে ডুব দেবে, সেই কি পাবে?  বানর বলল হা, রাজামশাই।

এই কথা ছড়িয়ে পড়ল রাজপ্রাসাদে। সবাই এল সেখানে। বানর, রাজা এবং অন্যান্যদের নিয়ে সে সরোবরের ধারে উপস্থিত হল। সকলেই জলে নেমে পড়েছে। রাজাও আর ধৈর্য রাখতে পারলেন না। তিনিও গলাজলে নেমে বললেন কই, কেউ তো উঠছে না।

বানর একটা গাছে উঠে বলল কেউ উঠবে না, মহারাজ। সবাই রাক্ষসের পেটে যাবে। বিনা দোষে আপনি আমার আত্মীয় বন্ধুদের ধ্বংস করেছেন। তাই আপনাকে শাস্তি আমায় দিতেই হল।

Post a Comment

0 Comments