বোকা ব্রাহ্মণ এবং তিন ঠগের গল্প
এক গ্রামে বাস করত তিন প্রতারক। বন্ধুত্ব ছিল তাদের মধ্যে। ফন্দি ফিকির করে লোক ঠকিয়ে জীবন ধারণ করত। একদিন তিন বন্ধু রাস্তা দিয়ে চলেছে আপন মনে। দেখল এক ব্রাহ্মণ কাধে একটা পাঁঠাকে নিয়ে আসছে। একজন বলল, দেখেছিস, কী নাদুস নুদুস পাঁঠা। ব্রাহ্মণটা কী বোকা। কঁাধে পাঁঠা তুলে নিয়েছে।
অপর জন বলল-জাকিয়ে শীত পড়েছে। এই শীতে পাঁঠার মাংস তোফা হবে।
তৃতীয় ঠক বলল—তাহলে পাঁঠাটা ব্রাহ্মণের কাছ থেকে হাতাতে হবে। কিন্তু কী করে?
প্রথম ঠগ বলল—তা তো বটেই। এমন একটা নধর পাঁঠা নিয়ে ব্রাহ্মণটা চোখের সামনে দিয়ে বেরিয়ে যাবে, আমরা বসে বসে দেখব,তা কি হয় ? সে আবার বলল—একটা ফন্দি এসেছে আমার মাথায়। দেখা যাক কী হয় ? তারপর তারা ফিসফিস করে আলোচনা করল নিজেদের মধ্যে। এক এক গাছের নীচে এক একজন বসল।ব্রাহ্মণ আপন মনে হাঁটছে।
প্রথম ঠগ হাতজোড় করে বলল, প্রণাম ঠাকুরমশাই। আপনি কুকুরটাকে কাঁধে করে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন ? ব্রাহ্মণ রেগে গিয়ে বলল—কুকুর? তুমি কি চোখে কম দেখ নাকি? পাঁঠাকে তুমি কুকুর বলছ কেন?
প্রথম ঠগ বলল — না ঠাকুর মশাই, আমার চোখ ঠিকই আছে। আপনার মাথা খারাপ হল বলে মনে হচ্ছে। কেউ কি কুকুরকে ছাগল বলে ? ব্রাহ্মণ জোরে জোরে পা চালিয়ে বলল কী আশ্চর্য! পাঁঠাকে তুমি কুকুর বলছ কেন?
কিছুদূর যাবার পর ব্রাহ্মণ আর একটা গাছের কাছে এল। দু'নম্বর ঠগটা সেখানে বসেছিল। সে বলল, পেন্নাম হই ঠাকুর মশাই। কোথা থেকে এই মরা পশুটা পেলেন? ওটাকে কাঁধে চাপিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন? ব্রাহ্মণ রেগে গিয়ে বলল, একে নিয়ে এসেছি যমের বাড়ি থেকে। বলি জ্যান্ত পাঁঠাকে মরা বলছ কেন? চোখে কি কম দেখ নাকি? দ্বিতীয় ঠগ বলল—আপনি যদি মরাকে জ্যান্ত বলতে চান, আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু মরা জন্তুকে কাঁধে নিয়ে গেলে লোকেরা হাসাহাসি করবে। ব্রাহ্মণ বলল—যত্তসব পাগলের প্রলাপ। এই বলে সে আবার হাঁটতে শুরু করল।
মনে মনে ভাবল, কী আশ্চর্য! জ্যান্ত পাঠাকে একজন বলছে কুকুর, আর একজন বলছে মরা পাঁঠা, তাহলে কী যজমান আমাকে ঠকাল? যাক গে, আগে তো বাড়ি যাই, তারপর না হয় আরও কিছুদূর হেঁটে গেল সে।
তিন নম্বর ঠগ একটা গাছের তলা থেকে বেরিয়ে এল। সে ঠাকুর মশাইকে প্রণাম করে হাসতে লাগল। ব্রাহ্মণ জিজ্ঞাসা করল, হাসছো কেন? কী ব্যাপার? হাসতে হাসতে তিন নম্বর ঠগ বলল—একটা গাধার বাচ্চাকে কেউ যদি কাঁধে করে নিয়ে যায় তাহলে হাসি পাবে কিনা বলুন?
তৃতীয় ঠগের কথা শুনে ব্রাহ্মণ হকচকিয়ে গেল। পাঁঠাকে সেইখানে নামিয়ে হনহনিয়ে বাড়ির দিকে এগিয়ে গেল। তিন ঠগ একসঙ্গে হো হো করে হাসতে লাগল। মহানন্দে পাঁঠার মাংসে রাতের খাওয়া সারল।
0 Comments