কাক ও কেউটে
এক গাছে বাস করত একজোড়া কাক। সেই গাছেরই তলার দিকে একটা কোটরে থাকত এক কেউটে। কাক-বৌ যতবার ডিম পাড়ে ততবারই কেউটে এসে ডিমগুলো খেয়ে যায়। কেউটের সঙ্গে কাকেরা পেরে উঠবে কি করে! তাই মনের দুঃখে তাদের দিন কাটে।
কাছেই অন্য এক গাছের তলায় মাটির গর্তে থাকত কাকেদের প্রিয়বন্ধু এক শেয়াল। আবার যখন কাক-বৌ-এর ডিম পাড়ার সময় হল তখন দুজনে মিলে গেল শেয়ালবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে। শেয়াল তো বন্ধু কাক আর তার বৌকে পেয়ে আহ্লাদে আটখানা। আদর করে বসিয়ে বলল, কতদিন পরে এলে, তা তোমাদের খবর সব ভাল তো ? শেয়ালের কথায় কাক-বৌ দুঃখে শোকে ডুকরে কেঁদে উঠল। কাক তখন ঘরের শত্রু কেউটের সব বৃত্তান্ত খুলে বন্ধুকে বলল ।
শেয়াল বলল, বন্ধু, দুঃখ করো না। বিপদের সময় এসেছ বন্ধুর কাছে, আমি আমার সাধ্যমত তোমাদের সাহায্য করব। তবে একটা কথা কী জান, কেউটে বলে কথা। একে ঘায়েল করতে হবে বুদ্ধি দিয়ে। শোন, কালই শহরে গিয়ে কোন বড়লোকের বাড়ি থেকে একটা সোনার হার তুলে নিয়ে এসে কেউটের বাসায় ফেলে দাও। তারপর দেখ মজাটা কি হয়। যেমন যেমন বললাম সেভাবে কাজ করো গিয়ে।
পরের দিন কাকেরা দুজনে মিলে গেল শহরে রাজার বাড়ি। রাজবাড়ির মেয়েরা সেই সময় পুকুরঘাটে গয়না টয়না খুলে রেখে চান করছিল। দামী পাথর বসানো গয়নাগুলো রোদ লেগে ঝকমক করছে। পাতার আড়াল থেকে কাক-বৌ আগে চারপাশটা ভাল করে দেখে নিল। তারপর শো করে নেমে এসে ছোঁ মেরে একটা ভারি গয়না তুলে নিয়েই আকাশে উড়ল। রাজকন্যার সখী দেখতে পেয়ে হৈ হৈ ধর ধর বলে চিৎকার করে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে লাঠিসোটা নিয়ে লোকজন ছুটল পেছন পেছন।
কাক-বৌ উড়ে এসে কেউটের কোটরের ওপর ঝুপ করে ঠোটের হারটি ফেলে দিল। তারপর পেছনের গাছের পাতার আড়ালে গা ঢেকে বসে রইল। ততক্ষণে রাজবাড়ির লোকজন গাছতলায় ছুটে এসে জড় হয়েছে। কেউটের কোটরের বাইরে হারের খানিকটা ঝুলে ছিল। গর্তে বসে কেউটে ফণা তুলে দুলছে তাও দেখতে পেল তারা। লাঠিসোটা নিয়ে কয়েকজনে মিলে তখন গাছে উঠল – পিটিয়ে মারল কেউটেকে। তারপর লাঠির ডগায় মরা সাপটা তুলে ছুঁড়ে ফেলে দিল জঙ্গলে। আর হার নিয়ে চলে গেল হৈ হৈ করতে করতে।
0 Comments